First World War | Why? What was the reason?

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধ


অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্চ ফার্ডিন্যান্ডকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । আর্চডিউক ফ্রাঞ্চ ফারর্ডিন্যান্ডকে হত্যা করেছিল এক সার্বিয় । যার ফলে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ও সার্বিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এই দুটি দেশের যুদ্ধ পরে বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়। এই যুদ্ধ ৪ বছর ৩ মাস ২ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধে প্রায় ১ কোটি মানুষ মারা যায় এবং আহত হয় প্রায় ২ কোটি মানুষ। ইউরোপ প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।  

আপনি জানেন কি অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্চ ফার্ডিন্যান্ডকে কেন হত্যা করা হয়? দুটি দেশের যুদ্ধ কেন বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয় ? কেন বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তি গুলো এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে? জানতে হলে দেখতে হবে পুরো ভিডিওটি অথবা পড়তে হবে পুরো লেখাটি।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ মূলত শুরু হয়েছিল অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার মধ্যে । কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ কেন সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তা জানতে হলে আমাদের একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে । সময়টা ১৮৬৬ সাল, তখন অষ্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরি মিলে একত্রিত হয়ে তারা গঠন করে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি । 1908 সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি “বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা” নামক একটি দেশকে দখল করে নেয়। কিন্তু এই দেশের মানুষ তা ভালোভাবে নিতে পারেনি এবং তাদের মাঝে বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরি হয়। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্চ ফার্ডিন্যান্ড এক রাষ্ট্রীয় কাজে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার রাজধানী সারাযেভোতে গিয়েছিলেন। যত্রাপথে এক আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সেনাবাহিনী তদন্ত করে জানতে পারল যে সে আততায়ী গাভরিলা প্রিন্সিপ ছিল সার্বিয়ার এবং সে ঐ বিদ্রোহীদের সাথে জড়িত ছিল। ফলে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি 23 জুলাই  দশটি শর্ত দিয়ে সার্বিয়াকে একটি আলটিমেটাম পাঠায়। কিন্তু সার্বিয়া সবগুলো দাবি মেনে নেয়নি। এর কারণ ছিল দুটি শর্ত সার্বিয়ার সার্বভৌমত্বকে অপমান করে ।সার্বিয়ার এত বড় একটা দূঃসাহস করা অন্যতম একটা কারণ ছিল যে রাশিয়ার মতো একটি বড় দেশ তাদের পাশে থাকা । সার্বিয়ার এই দঃসাহস অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিকে ক্ষিপ্ত করে এবং তারা সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ২৮ জুলাই ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি থেকে সার্বিয়ার দিকে সর্বপ্রথম ট্যাঙ্কের মাধ্যমে গোলাবর্ষণ শুরু হয় এবং এর মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।

 কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যকার কিভাবে বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয় ? জানতে হলে আমাদের একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে।  ১৯১৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই ইউরোপের পরাশক্তিগুলো দুইটি জোটে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল । ফ্রান্স, রাশিয়া এবং ব্রিটেন কে নিয়ে গঠিত হয়েছিল Tripple Entente. অন্যদিকে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ,ইটালী ও জার্মানিকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল Tripple Alliance. এদের মধ্যে এরকম চুক্তি হয়েছিল যে কোন দেশ যদি যুদ্ধে যায় তবে জোটবদ্ধ অন্য দেশগুলোকেও যুদ্ধে যেতে হবে । অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি যখন সার্বিয়াকে আক্রমণ করে তখন পূর্ব চুক্তি অনুসারে সার্বিয়াকে সাহায্য করার জন্য রাশিয়া সৈন্য পাঠায় । আবার অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সাথে জার্মানির চুক্তি থাকায় জার্মানি অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির পক্ষ নেয়। তখন জার্মানি রাশিয়াকে সকল সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য  12 ঘণ্টার আল্টিমেটাম পাঠায়। কিন্তু রাশিয়া আল্টিমেটাম প্রত্যাখান করলে জার্মানি 1 আগস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়।  জার্মানির চিন্তা করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে  ট্রিপল অ্যালায়েন্স এর সদস্য হিসেবে ফ্রান্স তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে ।এটি হলে দুই দিক থেকে আক্রমণ মোকাবেলা করা কঠিন হবে। তাই জার্মানি 6 সপ্তাহের মধ্যে আগে ফ্রান্সকে দখল করার চিন্তা করে। তারা চিন্তা করেছিল আগে ফ্রান্স দখল করে তারপর সব সৈন্যকে রাশিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ফ্রান্স জার্মানি-ফ্রান্স বর্ডারে 10 লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছিল। তাই জার্মানি চিন্তা করো বর্ডার দিয়ে আক্রমণ করলে অনেক ক্ষতি হবে ,তাই যদি বেলজিয়ামের ভেতর দিয়ে গিয়ে ফ্রান্সকে আক্রমণ করা যায় তাহলে তারা সহজেই ফ্রান্সকে দখল করতে পারবে।তাই জার্মানী সেনা প্রবেশের অনুমতি চেয়ে বেলজিয়ামের নিকট একটি পত্র পাঠায়। কিন্তু বেলজিয়াম মনে করে জার্মানির এই বিশাল সৈন্য বেলজিয়াম এর ভিতর দিয়ে গেলে তারা বেলজিয়ামকে দখল করে নিতে পারে। তাই বেলজিয়াম প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। কিন্তু জার্মানি বেলজিয়ামের তোয়াক্কা না করেই 3 আগস্ট ফ্রান্সকে দখল করার জন্য বেলজিয়ামের ভেতর দিয়ে সৈন্য পাঠায় এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। তখন বেলজিয়াম ১৮৩৯ সালের লন্ডন চুক্তি অনুসারে ব্রিটেনের কাছে সাহায্য চায়। তখন ব্রিটেন চিন্তা করেছিল জার্মানী ক্রামাগত ভাবে জিততে থাকলে তারা একসময় ব্রিটেনের উপর হামলা করে দিতে পারে। তাছাড়া শিল্পন্নোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ জন্য জার্মানী উপনিবেশ স্থাপনের চিন্তা করছিল যা ছিল ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের উপনিবেশ শাসনের জন্য নিশ্চিত হুমকি। তাই 4 আগস্ট ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। এবং এর সাথে সাথে ব্রিটেনের  উপনিবেশগুলো যেমন ভারতবর্ষ, নিউজিল্যান্ড যুদ্ধে যোগ দেয়। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ একের পর এক যুদ্ধে যোগ দিতে থাকে । এদিকে জার্মানির সাথে যোগ দেয় অটোমান সম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়া । তখন ফ্রান্স ,রাশিয়া,ব্রিটেন এবং তাদের মিত্র যেমন বেলজিয়াম, জাপান, ইটালী, মন্টিনগ্রো ইত্যাদি দেশকে একত্রে বলা হতো মিত্রশক্তি এবং জার্মানি,অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি,অটোমান সম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়াকে বলা হতো কেন্দ্রীয় শক্তি বা অক্ষশক্তি। মিত্রশক্তির সেনা ছিল চার কোটি 29 লাখ 59 হাজার 850 জন এবং অক্ষশক্তির সেনা ছিল দুই কোটি বায়ান্ন লক্ষ 74 হাজার 321 জন।
 ইউরোপে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন আমেরিকার যুদ্ধ থেকে অনেকটা দূরেই ছিল। কিন্তু তারা মিত্রশক্তির প্রধান অস্ত্র সরবরাকারী ছিল যা জার্মানিকে ক্ষেপিয়ে তুলে। ফলে জার্মানি নৌ-বাহিনী আমেরিকান বানিজ্য জাহাজ ডুবিয়ে দেয় এবং আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু করে দেওয়ার চিন্তা করে। উল্লেখ্য আমেরিকা ১৮৪৮ সালে মেক্সিকোর একটি অঙ্গরাজ্য দখল করে নিয়েছিল। জার্মানি মেক্সিকো প্রধানকে সাংকেতিক ভাষায় একটি গোপন পত্র লিখেন যাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে  যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলে এবং তাদের অঙ্গরাজ্য ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক ব্রিটিশ গোয়েন্দা তা জেনে যায় এবং তা আমেরিকার কাছে ফাঁস করে দেয়। ফলে আমেরিকা জার্মানির ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে যায় 1917 সালে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে  পড়ে। ফলে তা মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। মিত্রশক্তির ক্রমাগত আক্রমণের ফলে অক্ষশক্তি পরাজয় বরণ করে এবং 1918 সালের 11 নভেম্বর জার্মানির যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রাণঘাতী এই যুদ্ধ শেষ হয়।

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল

১. একটি কথা না বললেই নয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক পর্যায়ে যখন ব্রিটিশরা প্রায় হারতে বসেছিল তখন ইহুদি বিজ্ঞানী চাইম ওয়াইজম্যান “এসিটোন” নামক মরনাস্ত্র আবিষ্কার করে ব্রিটিশদের নিশ্চিত পরাজয় থেকে রক্ষা করেন। এর স্বীকৃতি সরূপ 1917 সালে লন্ডনে  ওয়াইজম্যানকে সংবর্ধনা দেওয়া কালে তিনি প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে বৃটেনের পক্ষ হতে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়ে ইহুদি ধর্ম যাজক রথচাইল্ডকে পত্র লেখেন। এটি বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। এর প্রেক্ষিতে এই ঘোষণার 31 বছর পর 1948 সালে প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা হয়।

২. দুই যুদ্ধের প্রধান অক্ষ শক্তি জার্মানি পরাজিত হলে ভার্সাই চুক্তি অনুসারে জার্মানির তার বিপুল এলাকা ও সাম্রাজ্যের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।জার্মানির জন্য বিমান, সাবমেরিন,ট্যাঙ্ক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় এবং যুদ্ধে হওয়া লোকসানের নামে তা ছিনেয়ে নেয়।এবং বাস্তবত তাদের সার্বভৌমত্বই ক্ষুণ্ন  করে দেয়া হয়। তাদের উপর বিপুল অঙ্কের জরিমানা ধার্য করা হয়।  জার্মানি এসব মেনে নিতে না চাইলেও মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর এটাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করে। এই অপমানজনক চুক্তি জার্মানিকে ঠেলে দিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে।

৩.  প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় এক কোটি মানুষ মারা যায় এবং আহত হয় প্রায় 2 কোটি মানুষ। এর একটি পরোক্ষ ফল হলো ইনফ্লুয়েঞ্জার যাতে 1918-1919 সালে প্রায় 5 কোটি মানুষ মারা যায় ।ইউরোপের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয় ।কলকারখানা আমি প্রায় অচল হয়ে যায়। ইউরোপ প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

৪. যুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ভেঙে যায় এবং austria ও hungary নামক আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয় অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং তুরস্কের জন্ম হয় মন্টিনিগ্রো বিলুপ্ত হয়ে যায়। যুগোস্লাভিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া নামক নতুন দেশের জন্ম হয়। রাশিয়ায় রাজতন্ত্র শেষ হয়ে যায় এবং প্রজাতন্ত্র শুরু হয়।

No comments

Theme images by nicodemos. Powered by Blogger.